নিজস্ব প্রতিবদেকঃ
আমার মাথার ভেতর বারবার Grave of the Fireflies মুভির সেই বিখ্যাত লাইনটা ঘুরতে শুরু করলো- Why do fireflies have to die so soon?” মনে হলো– কেউ যেন ধপ করে একটা দরজা বন্ধ করে দিল। আমার শৈশবের গ্রাম বাড়ির সেই মাঠ- বাঁশঝাড়-আঁধার আর বিস্ময়ভরা অদ্ভুত মায়ার জোনাক রাতগুলোর দরজা।
গ্রামের রাত মান্যেই ছিল আমার কাছে জোনাকির জন্য অপেক্ষা।
চাচার সাথে ছুটে যেতাম বাঁশঝাড়ে। আমার কালো চোখে জোনাকির আদুরে সবুজ আলোর প্রতিফলন! মনে হত শত শত তারা নেমে এসেছে মাটিতে। আমার হাতে, গলায়, মুখে… সে কি অপার্থিব সৌন্দর্য। আহারে সৌন্দর্য!
আমি জোনাকি ধরতাম, ভালোবেসে নয়- লাভের আশায়।
আমার নিজের একটা আলো থাকবে, আমার নিজের একটা সৌন্দর্য। আমার ছোট্ট তালুতে তাদের জেলবন্দী করে আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে তাদের দেখতাম। সে কি বিস্ময়, সে কি টানটান উত্তেজনা!
আজ যখন শুনি, এটাই নাকি সেই শেষ প্রজন্ম যারা জোনাকি দেখতে পাচ্ছে–আমার কেবলই মনে হতে থাকে, আমার সেই ছোট্টবেলায় তাদের দেয়া বন্দীত্বের জন্যই আজ নিভে যেতে হচ্ছে ওদেরকে। কি এক অদ্ভুত অপরাধবোধ ঘিরে ধরে আমাকে।
আমরা সবাই মিলে একটা গোটা প্রজাতির প্রাণ কেড়ে নিয়েছি; ওদের হারিয়ে যেতে হচ্ছে স্রেফ আমাদের সীমাহীন লোভের কারণে। আমাদের চোখ ধাঁধানো আলো, রেডিয়েশন, আর দূষণ বাঁচতে দিল না এই অদ্ভুত সুন্দর প্রাণটাকে।
আমাদের ছোট্টবেলার মতো ভবিষ্যতে হয়ত আর কোন শিশু গভীর বিস্ময়ে রাতের আঁধারে মাঠে ছুটে যাবে না জোনাকির লোভে।
ওরা জানবে না, কীভাবে নৈঃশব্দ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়,
কীভাবে এক পশলা আলোর জন্য বুকটা ধড়ফড় করে উঠতে পারে,
কীভাবে একটা পোকার সৌন্দর্য দেখে মনে হতে পারে- জীবন সুন্দর; এখানেই থেমে থাকুক না!
সেদিন এক রিসোর্টের বারান্দায় চুপচাপ বসেছিলাম অনেকটা সময়। যদি একটাও জোনাকি আজ ভুল করে দেখতে পারি–
মনে হচ্ছিলো, আজ যদি কোথাও একটা জোনাকি এখনো বেঁচে থাকে, এখানে আসে-
আমি তাদের কাছে, আমাদের এই সীমাহীন লোভের জন্য ক্ষমা চাইব–
তোরা বেঁচে থাক। আমাদের এই সীমাহীন লোভের কাছে প্লিজ হেরে যাস না।
আমার ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিচ্ছি। যদি আঁধারেই থাকতে হয়, আমি থাকব।
তবু তোরা বেঁচে থাক। হাজার বছর বেঁচে থাক।
আলো হয়ে, বিস্ময় হয়ে, আমাদের এক জীবনের গভীর হাহাকারভরা স্মৃতিগুলোর সাক্ষী হয়ে…